স্ত্রীর দুধ পান করা কি হারাম | স্ত্রীর বুকের দুধ পান করে ফেললে কি স্বামীর জন্য স্ত্রী হারাম হয়ে যায়? Is drinking wife's milk haram? Does the wife become haram for the husband if he drinks his wife's breast milk?
Admin
18 Sep, 2022
স্ত্রীর দুধ পান করা কি হারাম:একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যার উত্তর জানতে অনেক মানুষ আগ্রহী।
ইসলামি শরিয়তে এমন কোনো বিষয় নেই যার সমাধান দেওয়া হয়নি। কেননা ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
স্ত্রীর বুকের দুধ পান করে ফেললে কি স্বামীর জন্য স্ত্রী হারাম হয়ে যায়?
হাজার বছর থেকে অসংখ্য ইমাম ও ফকিহ মানুষের জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়ে আসছেন সুচারুভাবে।
তারা আমাদের সামনে ঠিক করে দিয়েছেন কোনটি হালাল কোনটি হারাম। কোনটি মাকরুহ কোনটি সুন্নত।
আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন স্পষ্টভাবে। কোনো বিষয় প্রকাশ করতে লজ্জা বা দ্বিধা করেননি।
ইমাম ও ফকিহগণ মানুষের প্রয়োজনীয় ও জীবন ঘনিষ্ঠ সকল বিষয় বয়ান করেছেন নির্দ্বিধায়। জানতে জানাতে কোনো লজ্জাবোধ করেননি।
আমারাও তাদের বিশ্লেষণ করা বিষয়গুলো আলোচনা করছি নিঃসংকোচে। যাতে মানুষের প্রয়োজনীয় মাসআলা জানতে কোনো বেগ পেতে না হয়।
তাই আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করছি স্ত্রীর দুধ পান করা কি হারাম? এই বিষয়টি নিয়ে। যাতে অগণিত মানুষ খুঁজে পায় তাদের প্রয়োজনীয় রসদ।
ব্লগটিতে থাকছে
স্ত্রীর দুধ পান করা কি হালাল
স্ত্রীর দুধ পান বৈধ থাকার রেফারেন্স
ইসলামি স্কলারদের অভিমত
দুধ পান করলে স্ত্রী কি দুধ মা হবে
স্ত্রীর দুধ পান করা কি হারাম
স্ত্রীর দুধ পান করার তিন প্রকার হতে পারে। নিচে তিন প্রকার উল্লেখ করছি।
রোগের ঔষধ হিসেবে স্ত্রীর দুধ পান
যৌনসম্ভোগের অংশ হিসেবে।
স্বাভাবিক অবস্থায় দুুধ পান।
যেহেতু স্ত্রীর দুধ পান করার তিনটি প্রকার রয়েছে তাই তিনটি প্রকার নিয়েই বিস্তিরত আলোচনা করছি।
কোনো রোগের ঔষধ হিসেবে দুধ পান
প্রথমত জেনে রাখা দরকার সকল ইমাম এ ব্যপারে একমত যে, স্ত্রীর স্তন থেকে নির্গত দুধ পাক বা পবিত্র।
যে কোনো পাক পবিত্র জিনিস মুখে নিতে বা পান করতে সমস্যা নেই। ইসলাম যদি
বিশেষ কোনো কারণে নিষেধ না করে, তবে যে কোনো পাক জিনিসই মুখে নেওয়া যায়।
আর সেটা যদি হয় রোগের ঔষধ হিসেবে তাহলে তার বৈধতা থাকে সর্বক্ষেত্রে।
এমনকি ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য শরিয়ত নাপাক বা হারাম বস্তুর অনুমোদন দেয়।
যেমন একটি হাদিসে আছে রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – উরাইনা সম্প্রদায়ের জন্য উটের মুত্র পানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
একইভাবে ফুকাহায়ে কেরাম কারো রোগের একমাত্র ঔষধ যদি হয় মদ তবে তার জন্য মদ পানের অনুমোদন দিয়েছেন।
সুতরাং ঔষধ হিসাবে যেহেতু হারাম বা নাপাক বস্তু গ্রহণ বৈধ তাই পাক বস্তু গ্রহণটা আরো জোড়ালোভাবে বৈধ হবে।
এ হিসেবে নিজ স্ত্রীর দুধ পান কেবল হালালই নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া – রাহিমাহুল্লাহ – বলেন –
অনুবাদ: তার স্ত্রীর দুধ দ্বারা উভয় চক্ষু ধৌত করা জায়েজ আছে। এর দ্বারা স্ত্রী তার জন্য হারাম হবে না।
হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম বলেন –
অনুবাদ: স্ত্রীর দুধ দ্বারা চোখের চিকিৎসা করতে ও পান করতে অসুবিধা নেই।
যৌনসম্ভোগের অংশ হিসেবে স্ত্রীর দুধ পান
মুসলিম দম্পতির যৌন সম্ভোগের ক্ষেত্রে ইসলাম বেশ স্বাধীনতা দিয়েছে। মুষ্টিমেয় বিধি নিষেধ ছাড়া মুসলিম দম্পতির জন্য সকল যৌন ক্রিয়া বৈধ।
নিষেধ বিষয়গুলো খুব সামান্য যেমন অ্যানাল সেক্স, মাসিক স্রাব চলাকালে সহবাস, রোজা ও ইহারাম অবস্থায় সহবাস।
এই কয়টি বিষয় স্পষ্টভাবে হাদিসে নিষেধ আছে। স্ত্রী সহবাসকালে কিন্তু স্ত্রীর দুধ পান নিষেধ করে কোনো হাদিস নেই।
তাই যৌনসম্ভোগ ও আনন্দের অংশ হিসেবে স্ত্রীর দুধ পান করা যাবে। এটা হারাম বা গোনাহ বলা যাবে না।
কেননা কোনো কাজকে হারাম বলতে হলে স্পষ্ট রেফারেন্স থাকতে হয়। এক্ষেত্রে কোনো রেফারেন্স নেই।
স্বাভাবিক ভাবে স্ত্রীর দুধ পান
সহবাসকালে স্ত্রীর দুধ পান নিয়ে আলোচনা করে এসেছি। এখন দেখবো সহবাস ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রীর দুধ পান করার হুকুম কি?
যেমন কোনো পাত্রে রাখার পর স্বামী সেই দুধ পান করে নিলো।
আমাদের পূর্বের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, স্ত্রীর দুধ পাক। আর পাক কোনো জিনিস পান বা ভক্ষণ করা হারাম হয় না।
তবে রুচি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে অনকে জিনিস ভদ্রতা ও উত্তম চরিত্রের পরিপন্থী হয়ে থাকে।
যেমন মাটি পাক। কিন্তু সেটা কেউ খায় না। গাছের। ডাল ঘাস লতা পতা পাক কিন্তু সেটা খাবার নয়।
একইভাবে স্ত্রীর স্তনের দুধ পাক। কিন্তু সেটা স্বামীর খাবার নয়। তা কেবল শিশু সন্তানদের খাদ্য।
তাই স্ত্রীর স্তনের দুধ পান নিয়ে উলামায়ে কেরামে কিছুটা মতভেদ করেছেন।
কিছু ফকিহ মনে করেন সেটা অপছন্দনীয়। চাই সেটা যৌনসম্ভোগকালে হোক বা স্বাভাবিক অবস্থায়।
শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য অভিমতের ভিত্তিতে স্ত্রীর স্তন চুষতে গিয়ে যদি দু- এক ফোটা দুধ পেটে চলে যায় সেটা দুষের কিছু নয়।
তবে স্বাভাবিক অবস্থায় যদি স্ত্রীর স্তন টিপে দুধ বের করে কোনো পাত্রে
রেখে পান করে তবে তা একটি অসুন্দর ও অপছন্দনীয় কাজ হিসাবে গণ্য হবে।
এটা সুষ্ঠু রুচিবোধ ও উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিপন্থী। তা থেকে বিরত থাকা নিশ্চয় প্রশংসনীয়।
শায়খ বিন বায – রাহিমাহুল্লাহ – বলেন,
অনুবাদ: কোনো অসুবিধা নেই। অর্থাৎ যদি স্বামী তার স্ত্রীর স্তন চুষে ( দুধ পান করে) সেটা তার কোনো ক্ষতি করবে না।
কেননা বড় বয়সে দুধ পান প্রভাব সৃষ্টি করে না। এটা অধিকাংশ আহলে ইলম মনে করেন। তবে এমন ক্রিয় কলাপ পরিহার করা উত্তম। এটা অপ্রয়োজনীয়।
দুধ পান করলে স্ত্রী কি দুধ মা হবে
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
অনুবাদ: আর তোমাদের দুধ মা ও দুধ বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম। (সুরা নিসা – ২৩)
রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – বলেন,
অনুবাদ: দুধ পান করার ফলে সে সব হারাম হয়ে যাবে যা রক্তিয় সম্পর্কে হারাম। ( সহিহ মুসলিম – ১৪৪৪)
পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় দুধ পান করার ফলে যে নারীর দুধ পান করা হয় সেই নারী দুধ পানকারীর জন্য দুধ মা হয়ে যায়।
এবং দুধ মায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম। তাই স্ত্রীর দুধ পান করলে সে কি স্বামীর জন্য দুধ মা হবে?
তাদের বিবাহ বন্ধনে কি কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে? এই প্রশ্নটি যৌক্তিকভাবে চলে আসে।
স্ত্রী দুধ মা হবে না
কোনো নারী দুধ মা হতে হলে একটি শিশুকে দুই বছর বয়সের মধ্যে দুধ পান করাতে হয়।
যদি দুই বছর মতান্তরে আড়াই ও তিন বছর পার হওয়ার পর দুধ পান করায় তবে সেই নারী আর দুধ মা হবে না।
এবং ঐ নারীর সাথে বিবাহ ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় নারীর মতো হারাম হবে না।
কাজেই স্বামী যদি আপন স্ত্রীর দুধ পান করে নেয় তাহলে স্বামী তার স্ত্রীর ছেলে হবে না এবং স্ত্রী ও স্বামীর দুধ মা হবে না।
কেননা স্বামীর বয়স অত্যন্ত দুই বা তিন বছর থেকে বেশি হবে। যে বয়সে দুধ পান করলে সেটা আর দুধ মায়ের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন –
অনুবাদ: দুগ্ধ পানের সময় সীমা পূর্ণের ইচ্ছাকারী নারী যেন তাদের সন্তানদের দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করায়। ( সুরা বাকারা – ২৩৩)
রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – বলেন
অনুবাদ : দুগ্ধ পান যদি খাদ্যনালী বিদির্ণ না করে তবে সেটার দ্বারা হারাম সাবিত হয় না। আর সেটা হয় খাদ্য গ্রহণের পূর্বে। ( তিরিমিজি – ১১৫২)
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেছেন একটি শিশু খাদ্য গ্রহণ করতে সাধারণত দুই বছর সময় লাগে।
আর অন্যান্য হাদিসও দুগ্ধ পানের মেয়াদ দুই বছর হওয়াকে সমর্থন করে।
তাই একটি শিশু দুই বছর বয়স পর্যন্ত দুধ পান করলে তার সাথে দুধ দানকারী নারীর দুধ মায়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। আর দুই বছর বয়স সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে সেই নারী দুধ মা হবে না।
সুতরাং কোনো স্বামী তার স্ত্রীর দুধ পান করলে সেই স্ত্রী স্বামী দুধ মা
হবে না এবং এর ফলে তাদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।
প্রশ্ন:
নিজের স্ত্রীর বুকের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?.
এখানে উল্লেখ্য যে,আমার একটি নবজাতক রয়েছে এবং সে খাওয়ার পরেও দুধ উদ্বৃত্ত্ব থেকে যায়…
বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব.
জবাব:
بسم الله الرحمن الرحيم
নিজের স্ত্রীর দুধ পান করলে স্ত্রী স্বামীর উপর হারাম হয়না।
কারণ সর্বোচ্চ ২বছর বয়সে দুধ পান করলে দুধ মায়ের সম্পর্ক স্থাপন হয়।
এর পর পান করলে হয়না।
তাই স্বীয় স্ত্রীর দুধ পান করার দ্বারা আপনার স্ত্রী আপনার উপর হারাম হয়ে যায়নি।
কিন্তু স্ত্রী স্তনের দুধ পান করা একটি মারাত্মক গোনাহের কাজ।