আগে প্রতিষ্ঠা নাকি আগে বিয়ে? | Established before or before marriage?

 #আগে_প্রতিষ্ঠা_না_আগে_বিয়ে?


ওয়েস্টার্ন কালচার অনুযায়ী পড়ালেখা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিয়ে করলে সমস্যাটা কোথায়? এর উত্তর আপনাদের অনুধাবনের সুবিধার্থে নিম্নে পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করা হলো–
 
১. প্রথমে এটা আপনাকে মানতে হবে যে, আমাদের মুসলিমদের কালচার বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড ও পরকীয়ার কালচার না, আমাদের কালচার হলো নিকাহর কালচার বা বিয়ের সংস্কৃতি। আর পশ্চিমাদের কালচার ঠিক এর উল্টোটা। আমরা বিয়ের মাধ্যমে বংশ বিস্তারে বিশ্বাসী আর ওদের প্রায় ৬০% এর ওপর বংশ বিস্তার হয় যিনা করে। নাউযুবিল্লাহ!
 
২. ফ্রি-মিক্সিং ও যিনাকে ওদের দেশে অনুপ্রাণিত করা হয় বিভিন্নভাবে। তাদের যুক্তি হলো এটা একটা ফিজিক্যাল নিড যা এড়িয়ে যাওয়া যায় না আর এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়ারও কিছু নেই। জীবনটা উপভোগ করার এইতো সময়! তাই ওরা স্কুল-কলেজের গন্ডি পার করার আগেই যিনা ও ধর্ষণ করে এবং অনেকে আবার এটাকে তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিতে পাপ মনে করে না! কিন্তু আমরা যিনা ও ধর্ষণকে মানুষ খুনের পর অন্যতম জঘন্য পাপ হিসেবে গণ্য করি।
 
৩. ওরা তো ওদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করছেই—এটার সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া-না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ওদের বিয়ে করলেই কী, না করলেই কী? এজন্যই তো তারা স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি লেভেলে যা করার করে নেয় আর এজন্যই তাদের দেশে ৬০%-এর ওপর জারজ সন্তান জন্মায়। অন্যদিকে আমরা মুসলিমরা দায়িত্ব নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করাতে বিশ্বাসী, অর্থাৎ শুধু বিয়ে করেই যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী।
 
৪. আমাদের দেশের কিশোর ও যুবকদের মাথায় যখন এই চিন্তা ঢুকানো হয় যে, প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে, তাই সে হিসেবে আমাদের জৈবিক চাহিদা পূরণের সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া-না হওয়ার এক অদ্ভুত সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেহ তো আর এই প্রতিষ্ঠা-অপ্রতিষ্ঠা বোঝে না—দেহ তো প্রাকৃতিকভাবেই ফাংশন করে।
 
৫. প্রায় কোনো ছেলেই ১৭-২০ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে ও প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে এটা সম্ভব না—এমনকি তাত্ত্বিকভাবেও সম্ভব না। কিন্তু প্রায় সকল ছেলেই ১৭-২০ বছর বয়সের মধ্যেই যৌন চাহিদার চরম শিখরে পৌঁছে যায়, বিশেষ করে এই অশ্লীলতা ও এন্ড্রোয়েড ফোনের যুগে।
 
৬. সমাজ-সংস্কৃতি, পড়ালেখা-প্রতিষ্ঠা, জৈবিক চাহিদা ও বিয়ে—এগুলো কোনোটির মধ্যেই ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া যায় না এদেশের প্রচলিত প্রথায়। বিশেষ করে সামাজিকতা নামক অদৃশ্য এক অপশক্তি জৈবিক চাহিদা ও বিয়ের মাঝে সুবিশাল প্রাচির হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি সামাজিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কী, উল্টো সামাজিকতার ভিত্তিহীন ভয় আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে বাক্সবন্দি করে ফেলেছে!
 
৭. ১৭-২০ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় যথাসময়ে বিয়ে একটা ট্যাবু হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যার ফলে বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার টেনশনে মানুষ যথাসময়ে বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
৮. ফলশ্রুতিতে প্রচণ্ড জৈবিক ক্ষুধার তাড়নায় দেশে পর্ন ও মাস্টারবেশন এডিকশন এবং যিনা ও ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। পুরোনো রিপোর্ট অনুযায়ী স্কুলগামি ৮০% শিক্ষার্থী পর্ন দেখে আর ৬০% শিক্ষার্থী যিনা করে।
 
৯. ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমরা প্রতিষ্ঠার কনসেপ্ট যেভাবে আমদানি করেছি, যিনার কনসেপ্ট তো আর সেভাবে আমদানি করতে পারি না, কারণ এটা ডাইরেক্টলি এ-দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু সমস্যাটা হলো, তাদের প্রতিষ্ঠার কনসেপ্টের সাথে তাদের যৌন চাহিদা পূরণের কনসেপ্টের কোনো লিংক নেই। এজন্যই তারা যখন তখন যিনা করে, কারণ যিনা করতে তো আর কোনো দায়িত্ব নিতে হয় না যেমনটা বিয়ে করতে নিতে হয়। অন্যদিকে আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে প্রতিষ্ঠার কনসেপ্টের সাথে যৌন চাহিদা পূরণের কনসেপ্টের একটি লিংক করে দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের সমাজে যৌন চাহিদা পূরণের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থা হলো বিয়ে।
 
১০. ওয়েস্টার্ন কালচার ও ইসলাম—এ দুটির মধ্যে একটি মিল পাওয়া যায়, যা হলো দুটিই স্বীকার করে যে, জৈবিক চাহিদা একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার এবং তা ছেলেদের সাধারণত ১৭-২০ বছর বয়সের মধ্যে এক্সট্রিম আকার ধারণ করে। কিন্তু পার্থক্য হলো- ওয়েস্টার্ন কালচার বলে, ‘পড়ালেখা করো আর জৈবিক চাহিদা অনুভূত হলে যিনা করে তা মিটিয়ে নাও।’ আর ইসলাম বলে, ‘বিয়ে করো, যিনা করো না এবং আল্লাহ জীবন বরকতময় করে দেবেন, অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা সহজ করে দেবেন।’
 
এ ১০টি পয়েন্ট গভীরভাবে এনালাইসিস করলে আমরা যে উপসংহারে আসতে পারি তা হলো, আমাদের দেশের অসচেতন মুসলিম মা-বাবা, মুরুব্বী ও শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠার পশ্চিমা কনসেপ্ট আর ইসলামের বিয়ের কনসেপ্ট—দুটিই কিশোর-তরুণদেরকে গলাধঃকরণ করাতে চায় আর অবিবাহিতদের মৌলিক যৌন চাহিদাটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে চায়। তারা বোঝে না যে, অশ্লীলতার এ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠার পশ্চিমা কনসেপ্টের সাথে পশ্চিমা যিনার কনসেপ্টটাও প্যাকেজ আকারে চলে আসে, অর্থাৎ এ দুটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, একটা থেকে আরেকটা পৃথক করা সম্ভব না—পরিসংখ্যান ও মেডিক্যাল সায়েন্স তাই বলে! এজন্যই আজ দেশে বিয়ে কঠিন হয়ে গিয়েছে এবং জৈবিক চাহিদাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুল পাশের আগেই পর্ন দেখছে, মাস্টারবেট করছে ও যিনা করছে, আর এগুলোর দীর্ঘমেয়াদী কুপ্রভাব জীবনভর ভোগ করছে এবং সমাজটাও কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। এই সিম্পল সায়েন্টিফিক এক্সপ্লেনেশনটা কেন আমাদের মুসলিম অভিভাবকদের মাথায় ঢোকে না, আমি বুঝি না! কিন্তু ধর্মহীন-বস্তুবাদি মুনাফিকদের মাথায় এটা ঠিকই আছে! তাই তো তারা আমাদের মধ্যে রিযিকের দুশ্চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ও ইসলাম ধ্বংসে তাদের শয়তানি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এখন তো তাদের অনেকে প্রকাশ্যেই যুবকদেরকে বলে, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড রিলেশনে যেতে ও যার-তার সাথে যিনা করতে! দেশের পুরো বিনোদন জগত এই অনৈতিক ও পশুবৃত্তিক বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই বেঁচে আছে। তারা খুব ভালোমতোই জানে যে, বালেগ হওয়ার পর কিশোররা প্রাকৃতিকভাবেই যৌনতার প্রতি ধীরে ধীরে প্রকট টান অনুভব করা শুরু করে। একদিকে প্রাকৃতিক এই প্রবল আকর্ষণ আর অন্যদিকে বিয়ের রাস্তা বন্ধ—এ দুইয়ে মিলে যিনার পথ সুগম করে দিচ্ছে কিশোরদের সামনে। নাউযুবিল্লাহ! আর সত্যি বলতে আল্লাহর শরীয়াতের সামনে মাথানত করলে এতকিছু তো আমাদের বোঝার দরকার নেই, আল্লাহ (ﷻ) কুরআনে অভিভাবকদের যা আদেশ করেছেন, তারা তা মানলেই তো সমাধান–
 
◈ “তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিতদের ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী (অপ্রতিষ্ঠিত) হলে আল্লাহ (ﷻ) নিজ অনুগ্রহে/দায়িত্বে তাদেরকে অভাবমুক্ত (প্রতিষ্ঠিত) করবেন। আল্লাহ (ﷻ) প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [24:32]
◈ “শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় (যেন তোমরা বিয়ে না কর) ও অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ (ﷻ) তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের (সচ্ছলতার) প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ (ﷻ) প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [2:268]
◈ “আর (তুমি প্রতিষ্ঠিত হও বা না হও) যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহরই।” [11:6]
লক্ষ্য করুন, প্রথম দুটি আয়াতে আল্লাহ (ﷻ) বলেছেন যে, তিনি ধনী (প্রাচুর্যময়) ও সর্বজ্ঞানী। আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি তো শুধু তিনিই করতে পারবেন যিনি আকাশ-যমিনের সকল সম্পদের একমাত্র মালিক ও পরম দানশীল। এজন্য আমাদেরকে শুধু তাঁরই ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে, অর্থাৎ–
(১) গায়েবের প্রতি ঈমান রাখতে হবে,
(২) তাঁর ওয়াদায় ভরসা করতে হবে এবং
(৩) তাঁর শরীয়াত (instruction) অনুযায়ী চলতে হবে। 
 
তবেই তিনি আমাদের রিযিকে ও জীবনে বরকত দেবেন। আর এ তিনটি কাজ আমরা করব কারণ যিনি আমাদেরকে এ তিনটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি হলেন সর্বজ্ঞানী আল্লাহ (ﷻ)—যার কথা আমরা কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ ছাড়াই অনায়াসে চোখবুজে মেনে নিতে পারি—বরং মেনে নিতে আমরা বাধ্য! কারণ, তিনিই আমাদের রব। শুধু তিনিই গায়েব বা ভবিষ্যত জানেন এবং তিনিই আমাদেরকে গায়েবের এ-ব্যাপারটি অবগত করাচ্ছেন যে, বর্তমানে আমরা কীভাবে চললে আমাদের ভবিষ্যত বরকতপূর্ণ ও সুখময় হবে। তাঁর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে এ-নিশ্চয়তা দিয়েছেন–
 
◈ “আল্লাহ (ﷻ) তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের হক (কর্তব্য) হিসেবে নির্ধারণ করেছেন—আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, মুকতাব গোলাম, যে চুক্তির অর্থ পরিশধের ইচ্ছা করে এবং বিবাহে আগ্রহী ব্যক্তি, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবনযাপন করতে চায়।” [Tirmidhi 1655]
অর্থাৎ বিয়ে করে পবিত্র জীবনযাপন করলে জীবন বরকতময় হবে এবং আল্লাহর সাহায্য সাথে থাকবে, এটা আল্লাহ ওয়াদা! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার বরখেলাফ করেন না। কিন্তু আল্লাহর হিদায়াতের এই পরিষ্কার পথ ছেড়ে অধিকাংশ মানুষ বা অমুসলিমদের পথে হাঁটলে জীবনে কখনোই সুখী হওয়া যাবে না—জীবনটা তখন কঠিন, একঘেয়ে ও বরকতহীন হয়ে উঠবে। আপনি চারদিকে তাকিয়ে দেখুন, পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিমদের জীবন এখন এমনটাই হয়ে গিয়েছে—পুরো রোবোটিক ও উদ্দেশ্যহীন! শুধু অল্প কিছু মুসলিম যারা হিদায়াতকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, তারাই জীবনটা প্রকৃতভাবে উপভোগ করছে, কারণ তারা তো গায়েবে বিশ্বাসী—তাদেরকে আল্লাহ ভবিষ্যত নিয়ে যা বলেছেন, তাতে তারা ঈমান এনেছে এবং তাঁরই ওপর তাওয়াক্কুল করেছে। মা শা আল্লাহ!
 
পরবর্তী প্রশ্ন হলো, ইসলামি সমাধান অনুযায়ী পড়ালেখার পাশাপাশি যথাসময়ে অর্থাৎ যৌন চাহিদা সৃষ্টি হলে ফিতনা থেকে বাঁচতে বিয়ে করলে সুবিধা কী? এর উত্তরও নিম্নে পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করা হলো–
 
১. ইসলাম বিদ্বেষী কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, নাস্তিক ও নামধারী জাহেল মুসলিমদের বক্তব্য হলো, আগে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ে। তারা যে-পশ্চিমাদের বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সংস্কৃতির সমর্থক, তা তাদের কথাবার্তায় স্পষ্ট বোঝা যায়, যদিও তারা এই মুসলিম মেজরিটি দেশে সে কথা মুখ ফুটে বলার সাহস পায় না। অন্যদিকে আল্লাহর বক্তব্য হলো, ‘আগে বিয়ে করো, তোমার আয়-রুযির সুব্যবস্থা করার আমার দায়িত্ব।’
 
২. ইসলাম প্রদত্ত সমাধানই একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান আর এর বিপরীত ‘সমাধান’ আসলে সমাধানের নামে জটিল জটিল দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টির নামান্তর! দেশে অশ্লীলতা ও অশ্লীলতাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা বিস্তারের রিপোর্ট দেখলে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এসকল অশ্লীলতা বাদ দিয়ে দেশের পরিস্থিতিটা একবার চিন্তা করে দেখুন তো। কী দেখতে পাচ্ছেন?
 
৩. ইসলামে বিয়ের পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ ও সুন্দর। বিশেষ করে এ দেশের সংস্কৃতিতে বিয়ের পদ্ধতি ও সুন্নাতি তরিকায় বিয়ের পদ্ধতি—দুটি পাশাপাশি তুলনা করলে সুন্নাতি তরিকায় বিয়ের পদ্ধতি যে-অকল্পনীয় সহজ, তা যে-কেউ বুঝতে পারবে আর আফসোস করবে যে, কেন স্রষ্টা প্রদত্ত এই সাধারণ বিষয়টা এত দিন সে বোঝে নেই ও গ্রহণ করে নেই! রাসূল (ﷺ) বলেন–
 
◈ “সবচেয়ে বরকতপূর্ণ বিয়ে হলো যে বিয়েতে খরচ কম হয় ও সহজে সম্পন্ন হয়।” [Abu Dawud 2117]
 
৪. ইসলাম আমাদের প্রবৃত্তির চাওয়া-পাওয়াকে অবমূল্যায়ন বা অস্বীকার করে না, বরং ইসলাম আমাদের কামনা-বাসনা পূরণের সেরা সমাধান প্রদান করে। সেক্যুলার সমাধানই বরং আমাদের প্রবৃত্তির চাহিদাকে অমর্যাদা করে এবং মানুষকে পশুসুলভ আচরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাধ্য/অনুপ্রাণিত করে। পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।
 
৫. ১৭-৩০ বছর বয়সে পুরুষের টেস্টোস্টেরোন (T) সর্বোচ্চ থাকে। তাই এ সময়েই বউটা সবচেয়ে বেশি দরকার! কিশোর ও তরুণ বয়সে যৌন মিলনার বাসনা অনুভূত হলে ইসলাম বলে যে, ‘বিয়ে করে হালালভাবে যত খুশি করো, কিন্তু ভুলেও অশ্লীলতা ও যিনার ধারে-কাছে যেও না—নিজের কলবকে কলুষিত করো না, সমাজকে নষ্ট করো না!’
 
৬. যেহেতু বিয়েটা আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ব নিয়ে করতে হয় এবং যেহেতু অপ্রতিষ্ঠিত অবস্থায় স্ত্রীর খাওয়া-পড়ার দায়িত্ব নেওয়া কঠিন, তাই আল্লাহ এই দায়িত্বটা অভিভাবকদের দিয়েছেন। বাসস্থান ও কোনোরকম তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এমন সকল অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করিয়ে দিতে ইসলামের দৃষ্টিতে সক্ষম ও বাধ্য! অথচ বাড়ি-গাড়ি আছে এবং সন্তানকে ভালো ভালো স্কুল-কলেজে পড়ায়, এরপরও অজ্ঞ মুসলিম বাবা-মা মনে করে যে, সন্তানকে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, কারণ তাদের কাছে বিয়ের কনসেপ্ট হলো, অপচয়, দ্বীনহীনতা ও প্রতিষ্ঠা—এ তিনটির সমন্বয়! আর তাই তো স্কুল পাশের আগেই তাদের অগোচরে তাদের ছেলে-মেয়ে premarital বাসর কাটিয়ে নেয় একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে!
 
৭. ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করলে সুবিধা কী? পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির প্রথম শর্ত হলো মৌলিক চাহিদাগুলো আগে ভালোভাবে ফুলফিল হতে হবে। কোনো মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ থাকলে মানুষ পড়ালেখা কেন, কোনো কাজকর্মেই মনোনিবেশ করতে পারে না। যেহেতু যৌন চাহিদা একটি মৌলিক চাহিদা, তাই এক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ চাহিদার প্রভাব মানুষের চরিত্রে ফুটে ওঠে। এর অভাবে মানুষের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়, কাজকর্মে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে এবং প্রগতি ধীর হয়ে যায়। অল টাইম মাথা গরম ও মেজাজ খিটখিটে থাকে। মানুষ তুলনামূলক অনেক কম প্রোডাকটিভ হয়ে যায় এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চাহিদামতো বউ থাকলে যে-কোনো পুরুষ যখনই উত্তেজনা বোধ করবে, সে তা মিটিয়ে নিতে পারবে। তখন সে ঠাণ্ডা মাথায় পড়ালেখা, কাজকর্ম ও প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিতে পারবে। অন্যথায় শয়তান তাকে প্রশান্তির লোভ দেখিয়ে নাচ-গান, অশ্লীল আড্ডা, পর্ন, মাস্টারবেশন, গার্লফ্রেন্ড, পতিতা এবং ধর্ষণ ও সমকামীতার দিকে নিয়ে যাবে।
 
৮. ছাত্র অবস্থায় বিয়ে যে-কোনো মুসলিমকে ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ও ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করে ও তদানুযায়ি পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে। কারণ, বিয়ের পর মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে না, সে নিজের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শেখে, দায়িত্ব নিতে শেখে—এক কথায় সে ‘পুরুষ’ হতে শেখে! একজন পুরুষের ম্যাচিউরিটি বৃদ্ধিতে, তাকে বাস্তবমুখী করতে ও তার কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে বিয়ের ভূমিকা অপরিসীম। সকল বিবাহিত পুরুষ এ-কথার সাথে একমত পোষণ করবে। যথাসময়ে সৎপাত্রে বিয়ে নারীদের নারীত্বকেও পূর্ণতা দান করে। তবে শর্ত হলো, দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে সাংস্কৃতিক জটিলতা পরিহার করে সম্পূর্ণ সুন্নাতি তরিকায় বিয়ে করা। আল্লাহ (ﷻ) ও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন–
 
◈ “পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ (ﷻ) তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ সকল বিষয়ের যা আল্লাহ (ﷻ) হিফাযাত করেছেন।” [4:34]
[এখানে শ্রেষ্ঠত্ব বলতে ‘পুরুষরা নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি’, তা বোঝানো হয়নি। বিস্তারিত তাফসিরে দেখুন।]
 
◈ “দুনিয়ায় সর্বোচ্চ উপকারী ও উপভোগের জিনিস হলো নেককার স্ত্রী।” [Muslim 715 k]
◈ “(স্ত্রী নির্বাচনে) তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে, অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” [Bukhari 5090]
◈ “তোমাদের প্রত্যেকের আখিরাতের কাজে সহায়িকা মুমিনা স্ত্রী গ্রহণ করা উচিত।” [Ibn Majah 1856]
◈ “চারটি জিনিসে (দুনিয়াবি) সুখ নিহিত—(এর একটি হলো) নেককার স্ত্রী।” [Sahih Al-Jaami 887]
 
৯. জীবনপথে প্রতিটি পদক্ষেপে জীবনসঙ্গিনীর স্পর্শ, ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বড় সাহস ও শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে পড়ালেখায়, কাজকর্মে ও সেবাযত্নে এবং সর্বোপরি দ্বীন পালনে সাহায্য করে। একজন আরেকজনের জন্য বিভিন্ন সমসাময়িক ফিতনার সাথে লড়তে ঢাল ও অস্ত্র হিসেবে থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের জন্য শয়তান ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে দুর্গ। তারা একে-অপরের জন্য শালীনতার পোশাকস্বরূপ। 
 
১০. স্কুল পাশের আগেই এখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী অশ্লীলতার জগতে অনুপ্রবেশ করে ও যিনা করে পুরো জীবনটাই নষ্ট করে দিচ্ছে! তাই এই সময়টাতে সর্বজ্ঞানী আল্লাহর আদেশ ও বিধান মোতাবেক অবিবাহিতদেরকে তাদের অভিভাবকগণ বিয়ে করিয়ে দিলে সমাজে অশ্লীলতা, যিনা ও ধর্ষণ বাড়বে, কমবে, না একই রকম থাকবে? নিঃসন্দেহে যিনা শুধু কমবেই না, বরং তা ৬০% থেকে ৬%-এর নিচে নেবে আসবে, ইন শা আল্লাহ! এজন্যই রাসূল (ﷺ) বলেছেন–
◈ “বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।” [Bukhari 5066]
◈ “যে বিয়ে করল, সে অর্ধেক দ্বীন পূরণ করল। কাজেই বাকী অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” [Bayhaqi 5486]
 
এ ১০টি পয়েন্ট একটু মন দিয়ে পড়লে যে-কোনো মুমিনই বুঝতে পারবে যে, আগে প্রতিষ্ঠা, না আগে বিয়ে—কোনটি? এমনকি ন্যূনতম বিবেক ও নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন অমুসলিমও ইসলামের এ দ্রুত বিয়ের কনসেপ্টের সাথে একমত হবে। কিন্তু সমস্যা হলো যে, কিশোর, তরুণ ও যুবকদের বয়ঃসন্ধিকাল ও যৌবনকে পুঁজি করে, অশ্লীলতার বিস্তার ঘটিয়ে যারা বছরজুড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামাচ্ছে এবং বিয়ের প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়ে মানব সভ্যতাকে পশু-পাখির সভ্যতায় রূপান্তর করতে ব্যতিব্যস্ত আছে, তাদের ব্যবসায় ধস নামবে, তাদের সুদূর পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে! তাই তারা এটা কিছুতেই হতে দেবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, মানবজাতিকে পরীক্ষার জন্য শয়তানের স্রষ্টা আল্লাহ (ﷻ) নিজেই বলেছেন যে, শয়তানের ষড়যন্ত্র অতি দুর্বল এবং আমরা মুমিনরা যেন শয়তানের বন্ধুদের ভয় না করে শুধু আল্লাহকেই ভয় করি–
 
◈ “সে তো শয়তান, যে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের/অনুসারীদের ভয় দেখায়। অতএব, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা সত্যিই মুমিন হও।” [3:175]
◈ “তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল।” [4:76]
◈ “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল করেছে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো ক্ষমতা নেই। তার প্রভাব তো কেবল তাদেরই ওপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে।” [16:99-100]
 
◈ “নিঃসন্দেহে আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, আর তারা দুশিন্তিতও হবে না।” [10:62]
◈ “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেবেন।” [65:4]
 
⇨ ‘#আগে_প্রতিষ্ঠা_না_আগে_বিয়ে?’
 
 

 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url